আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এর অধীনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ৫ম পর্যায় (২য় ধাপে) জমি ও গৃহ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সরাসরি উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (১১ জুন) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে যুক্ত হয়ে লালমনিরহাটের ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষদের সুখ-দুঃখের গল্প শোনেন তিনি।
এ সময় গৃহিণী সাহেরন বেওয়া নামে এক উপকারভোগীর সঙ্গে কুশল বিনিময়কালে মাইক্রোফোন কেড়ে নেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জহির ইমাম। এতে ইউএনও’র উপর ক্ষেপে যান প্রধানমন্ত্রী। তখনই দ্রুত আবার তাকে মাইক্রোফোনটি দিতে নির্দেশ দেন। এ সময় ওই উপকারভোগী বৃদ্ধা নারী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে হাত তুলে মোনাজাত করায় প্রধানমন্ত্রীও হাত তুলে মোনাজাতে শরিক হন।
ওই সময় প্রধানমন্ত্রী বলে ওঠেন, এই এই, কেড়ে নাও কেন। একি! এটা কেমন কথা হলো?
এরপর ওই বৃদ্ধার কাছে মাইক্রোফোনটি আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করতে থাকেন। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজেকে অসহায় দাবি করে ঘর পাওয়ায় কেঁদে কেঁদে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
তার বক্তব্যের শেষে প্রধানমন্ত্রী তাকে আরও ভালো থাকার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান। শেষে প্রধানমন্ত্রী আবারও উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘মোনাজাত করতেছে, মাইকটা টেনে নিয়ে গেল, হোয়াট ইজ দিস?’
এ সময় উপস্থিত অন্য কেউ হাত না তুললেও প্রধানমন্ত্রী ওই বৃদ্ধার সঙ্গে হাত তুলে দোয়া করেন। কুশল বিনিময়ের এক পর্যায়ে বৃদ্ধার কান্না দেখে প্রধানমন্ত্রীও কেঁদে ফেলেন।
সাহেরন বেওয়া তার বক্তব্যে বলেন, আগে মানুষের জমিতে অস্থায়ী ঘরে থাকতাম, এখন স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছি। নিজেদের বাড়িতে বসবাস করছি। আমার একটা ছেলে পাগল, সন্তানদের নিয়ে ঘরে থাকতে পারি, নিজের একটু জায়গা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে। আগে অন্যের জমিতে থাকতে হতো ছনের ঘরে, দুর্বিষহ কেটেছে ৪০বছর। জীবনের ক্লান্তি লগ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ঘর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তিনি জানান, স্বপ্নেও ভাবি নাই, নিজের পাকা বাড়ি হবে। সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগতেছে।
এর আগে দুপুর ১২টায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মহিষামুড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পেরে দরিদ্র এসব মানুষ বেশ খুশি হয়েছেন। অনেকে এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে মা হিসেবে সম্বোধন করে জানিয়েছেন ধন্যবাদ, মঙ্গল কামনা করেছেন প্রাণ ভরে।
মহিষামুড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘরের পাশাপাশি তাদের জীবনমান উন্নয়নে অনেককে সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ, গরু মোটাতাজাকরণ ও মৎস্য চাষেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে কোনো কোনো পরিবারের জন্য করা হয়েছে পুষ্টি বাগান। বিদ্যুৎ বিভাগ পরিবারগুলোর মাঝে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। এ ছাড়াও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে প্রতি ১০ পরিবারের জন্য একটি করে নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।
এ সময় লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদ, লালমনিরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. মতিয়ার রহমান, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ, লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড. সফুরা বেগম রুমি, লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম স্বপন, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাকিবুজ্জামান আহমেদ, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জহির ইমাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।